অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ ছেড়ে দেওয়া মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এনসিপিতে যোগ দেবেন কিনা– এখনও নিশ্চিত নয়। তারা গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিয়ে বিএনপি জোটের প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রত্যাশিত পদমর্যাদা পেলে এনসিপিতেই যাবেন সদ্য সাবেক দুই উপদেষ্টা।
গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন দুই তরুণ উপদেষ্টা। গতকাল ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিয়ে সরকার থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন মাহফুজ ও আসিফ।
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের দুই ছাত্রনেতা কোন দলে যোগ দেবেন, তা নিয়ে দুই দিন ধরে গুঞ্জন চলছে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, তারা অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের গঠিত দলে আসবেন। তবে সরকারি দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে তারা কয়েকদিন সময় নিচ্ছেন। কয়েকদিনের মধ্যে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির প্রতিষ্ঠাতাকালীন আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়েছেন অভ্যুত্থানের আরেক নেতা নাহিদ ইসলাম। এনসিপি সূত্রের খবর, আসিফ দলটিতে যোগ দিতে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়ার নিশ্চয়তা চান। আহ্বায়কের পরের পদমর্যাদা চান। উপদেষ্টার পদ ছাড়তে অনিচ্ছুক মাহফুজ সাংগঠনিক ক্ষমতা না চাইলেও দলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান চান। ফলে এনসিপিতে যোগ দেওয়া নিশ্চিত হচ্ছে।
মাহফুজ ও আসিফের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। পদত্যাগের আগের দিন গত মঙ্গলবার রাতে হেয়ার রোডে মন্ত্রিপাড়ায় আসিফের বাসায় বৈঠক করেন গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। রাশেদ খান বলেছেন, আসিফকে গণঅধিকারে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি আগে গণঅধিকারের ছাত্র সংগঠনের নেতা ছিলেন। আলোচনা চলছে। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির মিত্র দল গণঅধিকারের এক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়ে আসিফকে দলে আনা সম্ভব নয়। তাঁকে প্রস্তাব করা হয়েছে, গণঅধিকারে যোগ দিলে ঢাকা-১০ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী করা হবে। তবে আসিফ এতে সায় দেননি। তিনি সরাসরি বিএনপিতে যেতে চেয়েছিলেন। তবে দলটি আলোচনা না এগোনোয় এ সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। ফলে আসিফের গণঅধিকারে যোগদানের সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
এনসিপির নেতারা একই তথ্য জানিয়েছেন সমকালকে। তাদের ভাষ্য, আজকালের মধ্যে ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করবেন প্রায় ১৬ মাস সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আসিফ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা মাহফুজ আলম নির্বাচনে আগ্রহী নন। আগেও ছাত্র রাজনীতিতে তিনি মিছিল-সমাবেশের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন। ভবিষ্যতে একই ভূমিকায় থাকতে চান।
সরকারি এবং রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগে রাজি ছিলেন না তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ পরিচিতি পাওয়া এ ছাত্রনেতা নির্বাচন না করে সরকারে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়– নির্বাচনকালীন দায়িত্বে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নমুক্ত রাখতে পদত্যাগ করতে হবে। গতকাল উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নমুক্ত রাখতেই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাতেও মাহফুজ আলম পদত্যাগ না করে আগামী সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত উপদেষ্টা পদে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শ এবং সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় বুধবার সকালে পদত্যাগে সম্মত হন।
এনসিপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেন, মাহফুজ নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন না, এখনও নন। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তাঁকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে হবে। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে তিনি প্রার্থী হবেন। দলে এলে এনসিপির মনোনয়ন পাবেন। এ জন্য লক্ষ্মীপুর-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
মাহফুজ জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার ঘোর বিরোধী। তাঁরও বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার আলোচনা ছিল। কিন্তু পদত্যাগের কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে। এ বাস্তবতায় তাঁরও শেষ পর্যন্ত এনসিপিতে আসতে হবে। দুই উপদেষ্টাকে মূল্যায়নে নতুন পদ তৈরি বা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।



















